বরই খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুন

Spread the love

বরইয়ের খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নেই। বরই আমাদের খুবই অতি পরিচিত একটি ফল। টক স্বাদ যুক্ত এ ফল খেতে আমরা অনেকেই পছন্দ করি। শীতকালে বরই পাওয়া যায় বেশি। সহজলভ্য দেশীয় এ ফলের আছে অনেক গুণ। যা আমাদের শরীরের নানা উপকার করে।ধনেপাতা, কাঁচা মরিচে শিলপাটায় ছেঁচে টক বরই ভর্তা হোক আর ডাঁশা কচকচে মিষ্টি নারকেলি কুল হোক, শীতের নরম রোদের এ সময় যেন বরইয়ের। এ সময়ে দেশে ছোট-বড় টক–মিষ্টি বরই, নারকেলি কুলের সঙ্গে নতুন ধরনের বাণিজ্যিক উচ্চফলনশীল জাতের বাউকুল, আপেল কুল ইত্যাদিও পাওয়া যাচ্ছে হাটবাজারে। লবণ-মরিচ মেখে কাঁচা–পাকা বরই এমনিতেই জিবে জল চলে আসে । আবার বরই শুকিয়ে অনেক বছর ধরে আমাদের উপমহাদেশে আচার, চাটনি বানানো হয়ে আসছে নানা মসলা আর গুড়ের সমন্বয়ে।  ব্যাপার হলো আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও রাশিয়া, দক্ষিণ ইউরোপ, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যে জন্মায় এ বরইয়ের নানা জাত। চাইনিজ ভেষজ ওষুধে সেই হাজার হাজার বছর ধরে শুকনা বরইয়ের ব্যবহার হয়ে আসছে।

বরই এর বিভিন্ন জাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ ১) দেশি টক বরই ২) নারকেল বরই ৩) আপেল কুল ৪) বাউ কুল ৫) থাই কুল ইত্যাদি।

বরইয়ের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা : বরই সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের উৎস। বরইয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। ১০০ গ্রাম বরই শরীরের প্রায় ৭৭ শতাংশ ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করে থাকে। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। বরইয়ে থাকা বিভিন্ন কেমিক্যাল অনিদ্রাজনিত সমস্যা ও দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ বরই শরীরের ফ্রি র‌্যাডিকেলগুলোকে অকেজো করে দেয়। ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস সমৃদ্ধ বরই খেলে হাড় ও দাঁত মজবুত হয়।  এই ফলে আছে বিভিন্ন পলি স্যাকারাইড, ফ্ল্যাভেনয়েড আর ট্রাই টারপেনিক অ্যাসিডের মতো অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট আছে প্রচুর পরিমাণে। এতে ভিটামিন সি হিসেবে থাকা এসকরবিক অ্যাসিডও কিন্তু একধরনের অত্যন্ত কার্যকর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। ফ্রি র‍্যাডিকেলের বিরুদ্ধে এই অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের লড়াই করার অনন্য ক্ষমতা রয়েছে। তাই গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এই ফল খেলে তা ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। লিভারের ক্ষতিকর উপাদান নিষ্কাশন করতেও বরইয়ের ফ্ল্যাভেনয়েড বেশ কার্যকর, এমনটাও গবেষণায় উঠে এসেছে।বরইয়ে থাকা প্রয়োজনীয় পটাশিয়াম শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য ঠিক রাখে। বরই চর্বিহীন ও আঁশ জাতীয় খাবার হওয়ায় ডায়েটিশিয়ানরা ওজন কমানোর জন্য বরই খাওয়ার পরামর্শ দেন। পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বরই অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। বরই গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের বিরুদ্ধে কাজ করে। বরই হজমশক্তি বাড়ায়, দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বক টানটান ও সতেজ রাখে।

বরইয়ে থাকা স্যাপোনিন নামক পদার্থ মস্তিস্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আলঝেইমার ও ডিমেনশিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে ব্রেন ফাংশন ভালো করতে বরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বরইয়ে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি গুণের জন্য চায়নায় বরইয়ের চা পান করা হয়। পুষ্টিবিদদের মতে, শুকনা কিংবা কাঁচা বরই উভয়েই প্রদাহ উপশম করতে ভূমিকা রাখে। বরই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস সমৃদ্ধ। এই দুটি উপাদান ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। ব্যথানাশক ওষুধের ক্ষেত্রে বরই অনেক সময় বিপরীতমুখী ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে। তাই ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার সময় বরই এড়িয়ে যাওয়া ভালো।


Spread the love

Leave a Reply