ফ্রিল্যান্সিং  কি এবং কীভাবে শিখব? 

Spread the love

ফ্রিল্যান্সিং  কি?

ফ্রিল্যান্সিং  কি? কীভাবে শিখব এই প্রশ্ন আমরা অনেকেরই একনো অজানা। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) মূলত এমন একটি পেশা যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সিং-এর ইতিহাস বেশি পুরানো নয়। গত তিন-চার বছরে এই ফ্রিল্যান্সিং পেশা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে ফ্রিল্যান্সিং-এর ধারণাটি আগে থেকেই ছিল। ফ্রিল্যান্সিং এর সুচনা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। “GURU” –সর্বপ্রথম ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস যা ১৯৯৮ সালে SOFTmoonlighter.com হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জনপ্রিয়তার ধারাবাহিকতায় পরে Elance.com, RentAcoder.com, Odesk.com, GetAFreelancer.com, Freelancer.com, Limeexchange.com সহ আরো অনেক মার্কেটপ্লেস প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন ইন্টারনেটের পরিসেবার কারনে বাংলাদেশেও ফ্রিল্যান্সিং দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের চাহিদা অনেক অংশে কমিয়ে দিয়েছে এখন  ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং।

ফ্রিল্যান্সিং  কি?

এটি সাধারন চাকরির মতোই, কিন্তু ভিন্নতা হলো এখানে আপনি আপনার স্বাধীন মতো কাজ করতে পারবেন। এটি এমন এক ধরনের পেশা যেখানে কাজ করার কোনো ধরাবাঁধা সময় নেই। আপনার যখন ইচ্ছা, যেখানে ইচ্ছা কাজ করতে পারবেন। এখানে আপনার শুধু দরকার একটি নির্দিষ্ট ফিল্ডে দক্ষতা অর্জন করা। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) ও আউটসোর্সিং (Outsourcing) এর আওতা অনেক বড়। ফটো এডিটিং (Photo Editing) থেকে শুরু করে ভিডিও বানানো, এডিট করা (Video Editing) সহ গ্রাফিক্স ডিজাইনের সকল বিভাগই এর আওতাভুক্ত। এছাড়া ওয়েব ডিজাইন (Web design), কোডিং (Coding), এনিমেশন তৈরি (Animation Making), ব্লগিং (Blogging) সহ অনেক কাজ আপনি এখানে পেয়ে যাবেন। এরপরে এখানে আপনার নির্দিষ্ট কোনো ইমপ্লয়ার (Employer) নেই। যখন যে বায়ারের কাজ নিবেন ত খন সে-ই আপনার ইমপ্লয়ার (Employer)।সাধারন চাকরি থেকে এখানে আরেকটি বিষয়-এর ভিন্নতা আছে। সেটি হলো কাজের স্থান। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর নির্দিষ্ট কোনো অফিস নেই। মূলত আপনার বাড়িই হচ্ছে আপনার অফিস।এখানে বসেই আপনি বিভিন্ন দেশের বায়ারদের সাথে কাজ করতে পারবেন। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর ক্ষেত্রে খুব সহজেই সরকারি বেসরকারি অনেক চাকরির থেকে বেশি বেতনে কাজ করতে পারবেন আপনার যদি যথেষ্ট পরিমাণে দক্ষতা থাকে। এটা আমরা সবাই জানি যে, আমাদের দেশে দক্ষতার কদর হয় না সেভাবে; কিন্তু বাইরের দেশ গুলোতে হয়। আপনি সেসব দেশের বায়ারদের সাথে কাজ করে বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণ/তিনগুণ অর্থ উপার্জন করতে পারেন।ফ্রিল্যান্সিং এর কোনো প্রকারভেদ নেই। ফ্রিল্যান্সিং অনেক ধরনের হতে পারেন, যেমন- ফ্রিল্যান্স ইউটিউবার, ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি, ফ্রিল্যান্স ব্লগার, ফ্রিল্যান্স রাইটার, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা, ইত্যাদি।  ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আপনি ঠিক কত ধরনের কাজ করতে পারবেন তার কোন শেষ নেই। আপনি যে কাজ করতে চাইবেন বা আপনি যে কাজে দক্ষ সে কাজ দ্বারাই আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এই ক্ষেত্রটিতে আপনিই সর্বেসর্বা এবং আপনার সিদ্ধান্তই শেষ

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শুরু করবেন ?

এক্ষেত্রে আপনার যে কাজে আগ্রহ সব থেকে বেশি সে কাজটি বেছে নিবেন। এর ফলে আপনি কাজ করে যেমন মজা পাবেন, তেমন অনেক দূর যেতে পারবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত সেক্টরটিতে। ধরা যাক আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইন (Graphics Design) সেকশনটা বেছে নিলেন ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য। এই কাজটি কিন্তু  সবার দ্বারা ডিজাইন করা সম্ভব নয়। এটি বেছে নেওয়ার পূর্বেই আপনি দেখবেন যে, এই কাজটিতে  আপনার দক্ষতা  কেমন , কেমন আগ্রহ আপনার এই গ্রাফিক্স ডিজাইন এর উপর। যদি দেখা যায় সব কিছু ঠিকঠাক আছে, সেক্ষেত্রে এটিকে নির্ধারিত করে এই রিলেটেড যত কাজ আছে সব শিখবেন আপনি। যেমন: ব্যানার, লিফলেট, কভার পেজ, পোস্টার, লোগো ইত্যাদি ডিজাইন করা। এগুলো আপনি নিজে  নিজেই ইউটিউবে  খুঁজে সেখান থেকে দেখে দেখে শিখে নিতে পারেন, আবার চাইলে বিভিন্ন কোর্স আছে অনলাইনে সেগুলোও  শিখে করতে পারেন। পুরোটাই আপনার উপরে নির্ভরশীল। তো কাজ শেখার পরে এবার কাজ করার পালা। কাজ করার জন্য আপনাকে প্রথমেই একটি ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফর্মে (Freelancing Platform) একাউন্ট খুলতে হবে।এরকম অনেক প্লাটফর্ম রয়েছে বর্তমানে। যেমন: Fiverr, Freelancer, Upwork ইত্যাদি। একাউন্ট খোলার পর সেটিকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। দোকানে যেমন বিভিন্ন পন্য সাজানো থাকে, ঠিক তেমন করেই আপনার করা কাজগুলো পোর্টফোলিও আকারে সাজিয়ে রাখতে হবে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস (Marketplaces) গুলোতে। এর পরে শুধু প্রথম কাজের জন্য অপেক্ষা।আসলে প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রেই প্রথম ধাপটা একটু কষ্টকর হয়ে থাকে। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রেও বিষয়টি ভিন্ন নয়। এক্ষেত্রেও প্রথম কাজটা পাওয়া একটু কষ্টসাধ্য। তবে কারো রেফারেন্সের মাধ্যমে কাজ পাওয়া অনেক সহজ এখানে। সেক্ষেত্রে আপনি পরিচিত কোনো ফ্রিল্যান্সারের সাহায্য নিতে পারেন। বাংলাদেশে একটা বড় কমিউনিটি আছে ফ্রিল্যান্সারদের। সেখান থেকেও সাহায্য নিতে পারেন। প্রথম কাজ পাওয়া গেলে এর পর থেকে আর কাজের অভাব হয় না। তবে তার জন্য আপনাকে আপনার কাজের কোয়ালিটি বজায় রাখতে হবে, আপনাকে আপনার ক্লায়েন্টকে সন্তুষ্ট করতে  হবে

ফ্রিল্যান্সার হওয়ার কিছু কারনঃ

  • কাজ খোঁজার অনেক সুবিধা।
  • বেকারত্ব দূর করার সর্বোত্তম উপায়।
  • সহজ আয়।
  • যেকোনো সময় কাজ করা যায় যায়।
  • ব্যবহার সহজ এবং বিনামুল্যে কাজ শিখার ব্যবস্থা আছে।
  • প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।
  • আপনি যেটাতে দক্ষ এবং কাজ করতে ইচ্ছুক সেটা করার সুবিধা।

ফ্রিল্যান্সিং করার আগে যা জানা দরকার

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য কোনো একটি বিষয়ে দক্ষতা থাকা জরুরী। তার সাথে আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের উপরেও ভালো জ্ঞান থাকা লাগবে। তবে আপনার যদি কম্পিউটারের একাধিক বিষয়ে অনেক দক্ষতা থাকে, তাহলে  আপনি বড় পরিধিতে কাজ করতে পারবেন। আপনার ক্লায়েন্টদের বেশিরভাগই হবেন বাইরের তাদের সাথে আপনার ইংরেজিতে যোগাযোগ করতে হবে। তারা Skype বা অন্য মেসেঞ্জার সার্ভিসের মাধ্যমে আপনার ইন্টারভিউ নিতে পারেন। তাই ইংরেজির ওপর ভালো  থাকা দক্ষতা  খুবই গুরূত্বপূর্ণ।   

ফ্রিল্যান্সিং কাজ যেভাবে হয়

যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি (Employer) তার কোনো কাজ আউটসোর্সিং করাতে চান, তাহলে তিনি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে এসে সেই কাজটির জন্য ফ্রিল্যান্সারদের কাছ থেকে বিড (Bid) আমন্ত্রন করেন। একটি বিডের মধ্যে একজন ফ্রিল্যান্সার উল্লেখ করেন যে তিনি কত দিনের মধ্যে কাজটি শেষ করতে পারবেন, এজন্য তার পারিশ্রমিক কত হবে। এভাবে একটি কাজের যে কয়টি বিড হয় সেগুলোর মধ্য থেকে সবচেয়ে যোগ্য এবং সুবিধাজনক বিডটিকে Employer নির্বাচন করেন। এরপর সেই ফ্রিল্যান্সারের সাথে তিনি যোগাযোগ করেন এবং কাজের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। কাজ শেষে বিভিন্ন পদ্ধতিতে পে-মেন্ট করা হয় যা “টাকা তুলবেন কিভাবে” অংশে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

কোন কাজগুলো আপনার জন্য উপকারী 

  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
  • ওয়েব ও গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • ব্লগিং অ্যান্ড অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
  • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
  • কনটেন্ট রাইটিং

পার্টটাইম এবং ফুলটাইম ফ্রিল্যান্সিং:  ফ্রিল্যান্সিং এর কাজের জন্য আপনি নিজেই ঠিক করতে পারবেন যে, আপনি কতটা সময় কাজ করতে পারবেন এখানে, কতটুকু কাজ করতে চান এবং এই কাজটি আপনি পার্ট টাইম (part-time) হিসেবে করবেন নাকি ফুল টাইম (full-time) হিসেবে করবেন। আপনি যদি একজন ছাত্র হয়ে থাকেন অথবা ইতিমধ্যেই কোনো না কোনো সংস্থার চাকুরীজীবী হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনাকে পরামর্শ দিব এটাকে পার্ট টাইম হিসেবে করার  জন্য। আর যদি আপনার হাতে অফুরন্ত সময় থেকে থাকে তাহলে আপনি  ফুল টাইম হিসেবে নিতে পারেন ।

অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়া যায় যেভাবেঃ অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে একই কাজের জন্য কয়েক শত ফ্রিল্যান্সার নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন। ফলে চাইলেই ইচ্ছেমতো কাজ পাওয়া যায় না অনলাইন মার্কেটপ্লেসে। ক্লায়েন্টরাও চায় কম খরচে দক্ষ ব্যক্তির মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিতে। ফলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ পেতে হলে নিজেকে নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ করার পাশাপাশি নিজের অভিজ্ঞতা  সম্পর্কে তুলে  ধরতে হবে। ক্লায়েন্টের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের পাশাপাশি কাজ নির্দিষ্ট সময়ে জমা দিতে হবে আপনাকে। মনে রাখতে হবে যে, কাজের মান খারাপ হলে ক্লায়েন্ট আপনাকে কম রেটিং দেবে, যা দেখে অন্য ক্লায়েন্টরা আপনাকে আর কোনো কাজ দেবে না। একাধিকবার কম রেটিং পেলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আপনি আর কাজ করতে পারবেন না। নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার দক্ষতা থাকলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার জন্য খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না। শুরুতে কাজের পরিমাণ বা আয় কম হলেও ধীরে ধীরে কাজের পরিমাণ আপনার বৃদ্ধি পাবে।  অবশ্যই আপনাকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার পাশাপাশি আপনি যে কাজে দক্ষ, সে বিষয়ে হালনাগাদ প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে।


Spread the love

Leave a Reply